যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে বসবাসরত বাঙালিরা সুখী হিসেবেই জানত তৌহিদুল ইসলামের পরিবারকে। কিন্তু সেখানে এমন কী ঘটেছিল, যাতে ছয়জনকেই প্রাণ হারাতে হল, তার কূলকিনারা করতে নেমেছে পুলিশ।
এক পরিবারের ছয়জনের এভাবে প্রাণ হারানোয় হতভম্ব অন্য বাংলাদেশিরাও। এই ঘটনায় মর্মাহত হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় এলেন সিটিতে সেলিব্রেশন পার্কে ‘মোমবাতি প্রজ্জ্বালন কর্মসূচি’ গ্রহণ করেছে তারা।
সোমবার টেক্সাস সিটির ডালাস সংলগ্ন এলেন সিটির বাসা থেকে তৌহিদুল ইসলাম (৫৬), তার স্ত্রী আইরিন ইসলাম (৫৫), শাশুড়ি আলতাফুন্নেসা (৭৭), মেয়ে পারভিন তৌহিদ (১৯), দুই ছেলে তানভির তৌহিদ (২১) ও ফারহান তৌহিদের (১৯) লাশ উদ্ধার করা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, বিষণ্নতায় বিপর্যস্ত ফারহান ও তানভির মা-বাবা-বোন আর নানীকে গুলি করে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন।
স্থানীয় বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৌহিদুল ৮ বছর আগে টেক্সাসের এই সিটিতে বসতি গড়ার আগে নিউ ইয়র্কে থাকতেন। তার বাড়ি পুরান ঢাকায়। একটি রেস্তোরাঁয় ব্যবস্থাপকের চাকরি ছেড়ে টেক্সাসে সিটি ব্যাংকে চাকরি নেন তিনি।
তারা বলেন, আপাত দৃষ্টিতে তৌহিদুলকে সুখী পরিবারের কর্তা হিসেবে দেখতেন তারা। তার পরিবারে যে বড় কোনো সঙ্কট ছিল, তা কেউই বুঝতে পারেননি।
এলেন সিটির পুলিশ এই ঘটনাকে অভিবাসী সমাজের গভীরে এক সঙ্কট হিসেবে তদন্ত চালাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া দুই ভাই কেন এমন মানসিক দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন, তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তারা কি মা-বাবার কাছ থেকে কোনো ধরনের চাপে পড়েছিলেন? তারা কি নিজের ইচ্ছায় বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেননি? তারা কি বাসায় ফেরার পরই নিজেদের ভিন্ন এক পরিবেশে বন্দি ভেবেছিলেন? এসব বিষয় খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস’র জেনারেল সেক্রেটারি নাহিদা আলী বলেন, “একটি পরিবারের সকলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে হতবাক সকলে। আর কেউ যাতে এমন দুঃখজনক পরিস্থিতির ভিকটিম না হয়, সে জন্য সকলকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সন্তানের যে কোনো সমস্যায় যেন অভিভাবকেরা আন্তরিক অর্থেই সহায়তার হাত প্রসারিত করেন, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ”
তৌহিদুলের বড় ভাই মঙ্গলবারই ফ্লোরিডা থেকে এলেন সিটিতে ছুটে যান। তিনি শোকে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান তাদের পারিবারিক বন্ধু টেক্সাসের ব্যবসায়ী শাহীন হাসান।
তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে সবার প্রাণ ঝরেছে বুলেটে।
লাশ উদ্ধারের সময় বাসা থেকে দু’ভাইয়ের ছয়টি নোট বুক পুলিশ পেয়েছে বলে জানান শাহিন।
তিনি বলেন, সেগুলোসহ তাদের ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিফোন পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফারহান ও তানভিরের মেডিকেল রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনজনের লাশ হস্তান্তর করেছে কর্তৃপক্ষ। বাকি তিনজনের লাশ পাওয়ার পর বুধবারই এলেন সিটি মসজিদে জানাজা শেষে ডেন্টন সিটির মুসলিম গোরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
এই ঘটনা শুনে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অফিসের মিনিস্টার (কন্স্যুলার) হাবিবুর রহমানকে টেক্সাস পাঠিয়েছেন।